মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০১৩

mufti.siraji মিলাদ ও কিয়াম এর ইতিকথা

 বর্তমান সমাজে যে সব বিদ ' আত প্রচলিত রয়েছে তা দু ধরনের : এক . মৌলিক বিদ ' আত : যে ... বর্তমান সমাজে যে সব বিদ'আত প্রচলিত রয়েছে তা দু ধরনের:

★এক. মৌলিক বিদ'আত: যে বিদ'আতে পদ্ধতি ও মৌলিক নব উদ্ভাবিত তাই মৌলিক বিদ'আত বলেখ্যাত।

যেমন মাজার কেন্দ্রিকওরশ।

★দুই. পদ্ধতিগত বিদ'আত:

আর যে বিদ'আতের মৌল কাজটি শরীয়ত সম্মত ইবাদত,  কিন্তু পদ্ধতিটি সুন্নতের পরিপন্থী তা  পদ্ধতি গত বিদ'আত।

যেমন প্রচলিত. মিলাদ এবং মিলাদে ইয়ানবী সালামু আলাইকুম বলে  দাড়ানো।

এ মিলাদের মৌলিক কাজ হলো নবীর উপর দুরুদ পাঠানো।

কিন্তু বর্তমানে যে প্রচলিত নিয়মে মিলাদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করাহয় তা ইসলাম সম্মতনয়।

যা নতুন আবিষ্কৃত বিষয় এবং তা পালন করা বিদ'আত ।
কাজেই এমিলাদ পরিতাজ্য।


★(মিলাদের ইতিহাস)

প্রচলিত মিলাদের প্রবর্তক হলেন, ইরাকের মুসলনগরীর শাসনকর্তা  মুজ্জাফ্ফর উদ্দিন কুকুরী।

মূলত তার নির্দেশে আবুল খাত্তাব উমর নামক জনৈক আলেম ৬০৪সালে এর প্রচলন করেন।

ইনি ইবনেদাহিয়া নামে সমধিক পরিচিত।
এদের চরিত্র তেমন ভালো ছিলনা।

সুলতান মুজাফফর ছিলেন  একজন অপব্যয়ী  শাসক।

রাষ্ট্রীয়  অর্থ তিনি সীমাহীন ভাবে  খরচ. করতেন।

এই  মিলাদ অনুষ্ঠান এরপ্রসার ও প্রচলনে অঢেল অর্থ খরচ  করতেন।

এব্যাপরে ঐতিহাসিক যাহাবী বলেন তার মিলাদমাহফিলের  কাহিনী ভাষায় ব্যক্ত  করারমত
নয়।

মিলাদ অনুষ্ঠানের যোগদেবার জন্য  ইরাকের প্রত্যন্ত অঞ্চলহতে
ও আলজেরিয়াহতে লোকের আগমন ঘটত।

মিলাদের দিন  তারও তার  স্ত্রীর জন্য সুরম্য কাঠের গম্বুজাকৃতির তাবু তৈরী করাহত।
সেখানে গানবাজনা ও
  খেলা ধুলার আসর জমত।

মুজাফফর প্রতিদিন আসরের পরে   সেখানে আসতেন
এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করতেন।
অনুষ্ঠান    কয়েক দিন যাবত চলত।

অসংখ্য পশু জবাই করে আগত ব্যক্তিদের আহারের
ব্যবস্থা করাহত।
তিনি এউপলক্ষে তিন  লাখদিনার  বাজেট
পেশ  করতেন।

ফকির দরবেশদের জন্য
দু’লাখ  এবং অতিথিদের. জন্য একলাখ  দিনার।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বর্ণনা করেন,
আমি দস্তরখানায় বিশেষ প্রজাতির একশত ঘোড়া,
পাঁচহাজার বকরীর মাথা,  দশহাজার মুরগি, একলাখ গামলা,  এবং  তিনহাজার  হালুয়ার পাত্র গণনা করেছি।

এরপর ইমাম যাহাবী বলেন বিষয়টি আমার কাছে
অবিশ্বাস বলে  মনে হয়।

কারণ এর দশভাগের একভাগ ও অনেক বেশি।

এব্যাপরে ইমাম আহমদ বিন মুহাম্মাদ মিসরী বলেন
তিনি বাদশা ছিলেন।
সমকালীন উলামাদেরকে তিনি স্ব-স্ব ইজতেহাদ
(গবেষণা) অনুযায়ী
 আমল করার নির্দেশ দিতেন।

ইমামদের অনুসরণ করতে নিষেধ করতেন।

ফলে একশ্রেণীর আলেম সেদিকে ঝুকে পড়ে।
তিনি রবিউল আওয়াল মাসে
মিলাদশরীফের
আয়োজন করতেন।

তিনিই প্রথম বাদশা যিনি মিলাদের প্রবর্তন করেন।(আলমিনহাজুলওয়াজিহ১৬২)

অতএব বুঝাগেল, প্রচলিত মিলাদের প্রবর্তক
বাদশা মুজাফফর, ইসলামী বিধিবিধানের গুরুত্ব দিতেননা।
গানবাজনায় লিপ্ত হতেন।ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে মিলাদের আয়োজন করতেন।

আলেমদেরকে প্রলোভন দিয়ে ইচ্ছামত ব্যবহার করতেন।
অন্য দিকে যে আলেম প্রচলিত মিলাদ প্রবর্তনে সাহায্য করেন তার নাম মাজদুদ্দিন  আবুলখাত্তাব উমার বিন হাসান বিন আলী বিন জমায়েল।


তিনি নিজেকে সাহাবী দাহেয়াতুলকালবি এর বংশধর বলে  দাবি করেন।
অথচ তা ছিল মিথ্যাদাবি।

কারণ দাহেয়াতুল কালবি(রা.) কোনো উত্তরাধিকারী ছিলনা।
তা ছাড়া তার বংশ ধারায় মধ্যস্থ পূর্ব পুরুষরা ধ্বংসের মধ্যে নিপাপিত হয়েছিল।

তার পরেও তার বর্ণিত বংশধারায় অনেক পুরুষের উল্লেখ নাই। (মিজানুলই‘তিদাল১/
১৮৬) এই সরকারি দরবারী আলেম একটি পুস্তক রচনা করেন।
এই পুস্তকে মিলাদের রূপরেখা বর্ণনা করা হয়।৬০৪হিজরীতে শাসক মুজাফ্ফারকে পুস্তকটি উপহার দেন।

এতে তিনি খুশি হয়ে তাকে দশহাজার দিনার বখশিশ দেন।আর সে বছর হতেই তিনি মিলাদুন্নবী পালন করতে শুরু করেন।
(টিকা সিয়ারু আলামিননুবালা১৫/২৭৪)

মিলাদ প্রথা আবিস্কারের পরে সে সময়ের মানুষ বছরে একটি দিনে (১২রবিউল আউয়াল) তা পালন করত এবং তা কয়েক দিন ধরে চলত।
পরবর্তীতে ভক্তরা এটাকে সাওয়াবের কাজ মনে করে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে পালন করতে শুরু করে।

আগে বড় ধরনের মাহফিলের আয়জন করাহত।বর্তমান মনগড়া কিছু দুরুদওগজল গেয়ে শেষ করা হয়।

★যে কয়েকটি কারণে মিলাদুন্নাবি বিদ‘আত;
তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

১.মিলাদুননবী অর্থ : নবী(সাঃ)এর জন্মদিন। মহানবীর (সাঃ) জন্মদিন পালন করা যাবি জাতীয়সংস্কৃতি।
যেমন হিন্দুরা শ্রীকৃষ্ণের, খৃষ্টন রাঈসা (আঃ) জন্মদিন পালন করে।

২.রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ তার জন্য নির্ধারিত করা।

৩.ঐ দিনকে দরূদ পাঠের জন্য নির্দিষ্ট করা, যা রাসূল ও সাহাবাগণ এমনকি আইম্মায়ে মুজতাহেদীনগণের কেউ এমন আমল করেননি।

৪.রাসূল(সাঃ)-এর আত্মা উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন, মনে করে দাড়ানো।
এমনকি অনেক স্থানে রাসূল(সাঃ)’র জন্য একটি চেয়ার ও রাখাহয়, এবং ধারণা করাহয় রাসূল(সাঃ) এই চেয়ারে বসেন।

★কিয়াম

কিয়াম অর্থ দাড়ান।

প্রচলিত মিলাদের সাথে আরও একটি প্রথা সংযোজিত হয়েছে।
তা হল রাসূল(সা)এর সম্মানার্থে দাড়ান।

এটি মৌলিক বিদ'আতের অন্তর্ভূক্ত।
সম্পুর্ণ অপ্রাসাংগিক একটি বিষয় মিলাদের সাথে জুড়ে দেয়াহয়েছে।

এটি মিলাদের পরে আবিষ্কৃত হয়েছে।৭৫১হিজরির কথা।
খাজা তকি উদ্দিন ছিলেন একজন ভাবক বিওমাজ যুব (ভাবাবেগেউদ্দেলিত) ব্যক্তি।

মহানবী(সাঃ)এর নামে তিনি বিভিন্ন কাসিদা (গুণকীর্তণ মূলক কবিতা) রচনা করেন।
বরাবরের ন্যায় একদিন তিনি কাসিদা পাঠ করছিলেন।
বসা থেকে ভাবাবেগে হঠাৎ তিনি দাঁড়িয়ে কাসিদা পাঠ করতে থাকলেন।

ভক্তরাও তার দেখাদেখি দাঁড়িয়ে গেল। ব্যাস!
ঘটনা এখানেই শেষ।
তিনি আর কখনো এমনটি করেননি।

এখানে একটা বিষয় লক্ষনীয় যে, খাজা তকিউদ্দিন কবিতা পাঠ করতে করতে দাঁড়িয়ে গিয়ে ছিলেন।এটি কোন মিলাদের অনুষ্ঠান ছিলনা।

তিনি অনিচ্ছাকৃত দাঁড়িয়ে পড়ে ছিলেন।
কিন্তু মিলাদের জন্মের একশত বছর পরে বিদ‘আতপন্থীরা এটিকে মিলাদের সাথে জুড়ে দেয়।

ফলে কিয়াম বিশিষ্ট মিলাদবিদ‘আত হওয়ার বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে।

বস্তুত আমাদের দেশে এমন অনেক বিদ‘আত রয়েছে যা বুজুর্গদের বিশেষ মুহূর্তের আমল থেকে সৃষ্ট।
সংশ্লিষ্ট বুজুর্গ কখনো তার ভক্তদের এসব করার নির্দেশ দেননি,
অনুসারীরা অজ্ঞতাবশত এসব কাজ চালু করেছে।

দয়াময় প্রতিপালক সুহমান আল্লাহ আমাদেরকে যে কোন বিদআত থেকে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে সহীহ শুদ্ধভাবে দ্বীনী আমলের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের মহাকল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন।


(মুফতী সিরাজী)